Close

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সদ্য পদচ্যুত একজন কর্মকর্তা ফোন করে বেনজীরকে পালানোর পরামর্শ দেন

বেনজীর আহমেদ এখন দেশে নেই। তিনি দুবাইতে অবস্থান করছেন। তার স্ত্রী এবং কন্যারাও কেউ দেশে নেই। যাদেরকে দুর্নীতি দমন কমিশন তলব করেছে তারা এপ্রিল মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। বেনজীর আহমেদের তিন কন্যার মধ্যে দুই কন্যা এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন এবং এক কন্যা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সদ্য পদচ্যুত একজন কর্মকর্তা ফোন করে বেনজীরকে পালানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঐ কর্মকর্তা এবং বেনজীর আহমেদ একই এলাকার বাসিন্দা। বেনজীর আহমেদকে ঐ কর্মকর্তা- প্রধানমন্ত্রী তার উপর ক্ষুব্ধ এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে কোন রকম প্রশ্রয় দিবে না, দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। এর পর পরই বেনজীর আহমেদ সমস্ত টাকা পয়সা উত্তোলন করেন এবং দুবাইতে চলে যান বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, সকলেই জানতো যে বেনজীর আহমেদ এমিরেটস ইন্টারন্যাশনাল এর একটি ফ্লাইটে দুবাই যাচ্ছেন। কিন্তু সে সময় তার উপর ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। তাছাড়া সরকারের কোন মহল থেকেও তাকে আটকানোর কথা বলা হয়নি। এজন্যই তিনি গিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দৈনিক কালের কণ্ঠে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এবং এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত আহ্বান করেন। ব্যারিস্টার সুমনের আবেদনে সাড়া দিয়ে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং এর পর পরই দুর্নীতি দমন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার জন্য কাজ শুরু করে এবং একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়। এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কেউই তার ফোন ধরেননি। এবং তার যোগাযোগের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঐ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বেনজীর আহমেদ। পরবর্তীতে ঐ কর্মকর্তা বেনজীরকে জানান যে, প্রধানমন্ত্রী তার উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ সমস্ত বিষয়ে তিনি কোন রকম ছাড় দিবেন না। এই বার্তাটি পাওয়ার পর বেনজীর আহমেদ নড়ে চড়ে বসেন। তারপরও তিনি কয়েক জায়গায় চেষ্টা করেছিলেন সরকারকে নমনীয় করার জন্য। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বেনজীর দেশ ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য যে, বেনজীর আহমেদের দেশে ছাড়াও দুবাইতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং তার মেয়ের জামাই দুবাইতে একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন। যে কারণে সহজেই তার দুবাইতে যাওয়া এবং সেখানে থাক নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল। সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তার বহু আগেই তিনি বিদেশ চলে গিয়েছিলেন এবং ব্যাংক একাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। ৩৩ টি ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসব ব্যাংক থেকে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং কন্যারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও বেনজীর  আহমেদের কিছু সম্পদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এখন দেখার বিষয় যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের পর বেনজীর আহমেদকে আনার ব্যাপারে সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে কিনা। এবং সে উদ্যোগ কতটা সফল হয়। কেননা, দুবাইতে এই ধরনের বহু পলাতক ব্যক্তি আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0 Comments
scroll to top