দুর্বৃত্তের গুলিতে বাবা হারানো এক সন্তানের এমন আবেগঘন স্ট্যাটাস।
রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায় জুমার নামাজে অংশ নিতে মসজিদে যাওয়ার পথে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে বাবা জাহাঙ্গির আলমের হত্যা নিয়ে ছেলে মাকসুদ আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার লাল স্বাধীনতা আমার থেকে আমার আব্বুকে কেড়ে নিছে’। হৃদয় নাড়া দেয়ার মত মর্মস্পর্শী ষ্টাটাসটি সবশ্রেণীর মানুষকে মর্মাহত করেছে।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়ার আছদ আলী মাতুব্বরের বাড়ির কাছে সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নিহত ব্যবসায়ীর এক কর্মী আহত হয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের আগ মুহূর্তের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যায়, অস্ত্রধারীরা সবাই মুখোশ পরা ছিল। যাতে ছবি প্রকাশ না করা যায়। তারা মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থলে আসে। সংখ্যায় ছিল ১০ থেকে ১৫ জন। স্থানীয় এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ পাওয়া যায়।
প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যার ঘটনার পর রাউজান এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে পুলিশ সুপার বলেছেন, খুনিদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সহসা গ্রেফতার করা হবে। নিহতের ভাই দাবি করেছেন চাঁদা না দেয়ায় খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ প্রসঙ্গে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সান্তু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খুনের ঘটনার পর পরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খুনিদের সম্পর্কে অনেক তথ্যও পেয়েছি। তারা খুব সহসা ধরা পড়বে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত প্রকাশ করতে চাই না।’
নিহতের ছোট ভাই দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে বিদেশ থেকে ঢাকায় আসে জাহাঙ্গির আলম। শুক্রবার দুপুরে বাসা থেকে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে শহরের বাসা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। মসজিদে পৌঁছার আগে সন্ত্রাসীরা খুন করে তাকে। আমার ভাই কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়। আমাদের ধারণা কোন সন্ত্রাসী চাঁদা দাবি করেছে। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর আলম খাতুনগঞ্জে শুটকির ব্যবসা করলেও ব্যবসায়িক কাজে মাঝে মাঝে মালয়েশিয়ায় আসা যাওয়া করেন। বুধবার রাতে তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। শুক্রবার ভোরে তিনি বিমানে চট্টগ্রামে পৌঁছেন। পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। শুক্রবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলম মোটরসাইকেল করে চট্টগ্রাম শহর থেকে জুমার নামাজ পড়তে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী আব্বাস উদ্দিন। তিনি পেছনে বসা ছিলেন। মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছলে আগে থেকে অবস্থান নেয়া সন্ত্রাসীরা তারে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর জাহাঙ্গির আলমের মাথায় কয়েক রাউন্ড গুলি করে চলে যায়। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় কর্মচারী আব্বাস উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন আহত হন। মসজিদে খুতবা চলার সময় গুলির শব্দে মুসল্লিরা বেরিয়ে পড়েন। মুসল্লিদের উপর হামলা করেন সন্ত্রাসীরা। এরপর দ্রুত তাকে নগরীর এভার কেয়ার হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বজনরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, সন্ত্রাসীদের মোটা অঙ্কের চাঁদা না দেওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, মো. জাহাঙ্গীর আলম একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের শুঁটকির পাইকারি ব্যবসায়ী। রাউজানে নোয়াপাড়ায় তার একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। দানবীর হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গিরকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। তিনি কোনো রাজনীতি দলের সঙ্গে কোন সময় জড়িত ছিলেন না বলেও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সফিকুল আলম বলেন, মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে এলে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।