ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘মাত্র চারটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। এরা প্রায় সবাই ব্যক্তিগত গাড়িতে স্কুলে আসে। ফলে যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী। সেকারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি স্কুলের নির্দিষ্ট বাসে চড়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে। কোনো শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে স্কুলে আসতে পারবেন না।’
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে গুলশান নগর ভবনে স্কুলবাস চালু করার প্রাথমিক কর্মকৌশল নির্ধারণ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে স্কুলবাস চালু হলে যানজট কমে যাবে। ফলে দূষণ কমবে, কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশে কমবে। আমরা অংশীজনদের সাথে কথা বলছি। অনেক শিক্ষক একমত পোষণ করেছেন। এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবার আন্তরিক সহযোগিতায় প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার চারটি স্কুলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্কুলবাস চালু করা হবে। স্কুল চারটি হলো- চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়াল।’
স্কুলবাস চালু করার প্রাথমিক কর্মকৌশল নির্ধারণ উপলক্ষে আলোচনা সভায় রাজধানীর চারটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক, টেকনিক্যাল দল এবং স্কুলবাস চালনার জন্য ‘শাটেল ফর স্কুল’ অ্যাপসের প্রধান নির্বাহী রিয়াসাত চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘অনেক স্কুলে দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অসংখ্য প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে। স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলবাস চালু হলে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার ব্যাপক হারে কমে যাবে। ছেলে-মেয়েরা অনেকে একসাথে বাসে যাওয়া-আসা করলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। ছেলে-মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হবে। তাদের সক্ষমতা বাড়বে।’
ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা বিষয়ে অভিভাবকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘সন্তানরাই বাবা মায়ের সবচেয়ে মূলবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলবাসগুলোতে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রাকিং ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তা ও স্কুল বাসের চালক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। একটি হটলাইন নাম্বার থাকবে যেটির মাধ্যমে অভিভাবকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন, জানতে পারবেন তাদের সন্তানদের অবস্থান।’
এসময় তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। তাদের যেন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে হয় সেক্ষেত্রে নিরাপদ স্কুলবাসই চমৎকার সমাধান হবে। সময়, নিরাপত্তা ও খরচ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই এসব বাস সার্ভিস চালু করা হবে। আমরা চাই একটি টেকসই সমাধান হবে।’
বাসের রুট নির্ধারণের বিষয়ে অভিভাকের অপর প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘সকল শিক্ষার্থীদের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাস রুট নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাসে নির্দিষ্ট রুটের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে। এর ফলে খরচ অনেক কমে আসবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নে মেয়র জানান, শুরুতে ঢাকা উত্তরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে সকল স্কুলেই স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা হবে। এই বাস সার্ভিসের সফল বাস্তবায়নের জন্য মাইন্ডসেট খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে অভিভাবকদের। স্কুলবাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক করা হলে স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বহন করা ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সভায় অন্যান্যের সাথে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকা’র প্রিন্সিপাল আছিয়া আলম চৌধুরী, স্কলাস্টিকা স্কুল, মিরপুর শাখার প্রিন্সিপাল নুরুন নাহার মজুমদার, স্যার জন উইলসন স্কুলের প্রিন্সিপাল সাবরিনা শাহেদ ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়ালের প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।