আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিডিএ’র নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা হতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮–এর ধারা-৭ অনুযায়ী মোহাম্মদ ইউনুছকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর মেয়াদে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে এ অফিস আদেশ জারি করা হলো।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ চট্টগ্রামের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনুছ বর্তমান চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের স্থলাভিষিক্ত হবেন। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষের মেয়াদ আজ শেষ হয়েছে। তিনি দুই দফায় পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষকে প্রথম দফায় ২০১৯ সালে দুই বছরের জন্য এবং ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর আগে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল দুই বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এরপর আরও পাঁচ দফায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোট ছয় দফায় সব মিলিয়ে ১০ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আবদুচ ছালাম।
উল্লেখ্য: ছাত্রলীগের স্কুল সভাপতি থেকে নগর সভাপতি পর্যন্ত হয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুছ। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সর্বদলীয় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীন।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দুবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক হন। ১৯৮৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ ১৯৫৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বি.কম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ডিগ্রি পাস করেন। তিনি হাটহাজারীর নুর আলী মিয়ার হাট ফরহাদাবাদ গ্রামের হিম্মত মুহুরী বাড়ীর মরহুম নুর হোসেনের সন্তান। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক উচ্চতর হিসাব কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধা ফোরাম ‘৭৫ এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলার আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম শহর সমাজসেবা প্রকল্প সমন্বয় পরিষদ- ১ এর আজীবন সদস্য এবং পৌর জহুর হকার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
Post Views: 695